স্বদেশ ডেস্ক: সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিতর্কিত ধারায় ব্রিটেনের বিমানবন্দর ও অন্যান্য বন্দরগুলোতে কোনো উপযুক্ত কারণ ছাড়াই মুসলিমদের হয়রানির ঘটনা ঘটছে। সেসব ঘটনায় ৬ ঘন্টা পর্যন্ত আটক রেখে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। মুসলিমদের এমন হয়রানির ঘটনার পরিসংখ্যান প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠন ‘কেইজ’ বলছে, সন্ত্রাস নির্মূলের ওই আইনটির প্রয়োগ মুসলিমদের প্রতি এতটাই বৈষম্যমূলক যে, এটি ইসলামবিদ্বেষী আচরণে পরিণত হয়েছে।
গত ২০ আগস্ট মঙ্গলবার প্রকাশিত কেইজ-এর এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪ লাখ ২০ হাজার ঘটনা বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি দেখেছে , মাত্র ০.০০৭ শতাংশ ক্ষেত্রে আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। অথচ জিজ্ঞাসাবাদের নামে হাজার হাজার লোককে হয়রানি করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে মুসলিম নারীদের বোরকা ও হিজাব খুলতে বাধ্য করা হয়।
ব্রিটেনে ২০০০ সালে প্রণীত সন্ত্রাস দমন আইনের ৭ ধারায় সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্দেহবশত যে কাউকে ৬ ঘন্টা পর্যন্ত আটক রাখতে পারে। এ সময় আটক ব্যক্তির নিরব থাকার কোনো সুযোগ নেই। তাদের ফোন, কম্পিউটার ও পাসওয়ার্ড সোপর্দ করতে হয়। এমনকি চাওয়ামাত্র আঙ্গুলের ছাপ এবং ডিএনএ নমুনাও প্রদান করতে হয়। আর ওই আইনের কারণে সীমান্তে বিভিন্ন ব্যক্তিদের পরীক্ষা করা হয়; কিন্তু পরীক্ষার নামে মুসলিমদের হয়রানির অভিযোগ ও প্রমাণ গেছে।
কেইজ বলছে, তথ্য অধিকার আইনের অধীনে স্বরাষ্ট্র বিভাগের কাছে তারা আটক ব্যক্তিদের ধর্মীয় পরিচয়ের তালিকা চেয়েছিল; কিন্তু স্বরাষ্ট্রবিভাগ তাদের সেই অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে ২০১৪ সালে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিমানবন্দরে ৭ ধারায় আটক ব্যক্তিদের ৮৮ শতাংশই মুসলিম।
বিমানবন্দরে হেনস্থার শিকার ওমর নামে একজন ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেন, ২০০৫ সাল থেকে অন্তত ৪০ বার তিনি বিমানবন্দরে আটক হয়েছেন। বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও ইতালি থেকে ফেরার পথেও তাকে আটক করা হয়।
ব্রিটেনের সর্বাধিক প্রচারিত ফ্রি সংবাদপত্র মেট্রো। ২৩ আগস্ট শুক্রবার তাদের অনলাইনে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, হজ পালন শেষে সৌদি আরব থেকে ফেরার পথে মোহাম্মদ (কেবল নামের প্রথম অংশ প্রকাশ করা হয়েছে) নামে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীসহ আটক হন। ৩৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ জানান, তারা তুরস্ক হয়ে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমান থেকে বের হতেই তাদের নিয়ে যায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। আলাদাভাবে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রায় ৫ ঘন্টা পর তাদের ছাড়া হয়।
মোহাম্মদ জানান, ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে তার মতামত জানতে চাওয়া হয়। ম্যানচেস্টার অ্যারিনাতে যে বোমা হামলা হয়েছিল সে বিষয়ে তার অনুভূতি কী, সৌদি আরবে কোথায় ছিলেন, কার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং হজ পালন থেকে ফিরে তিনি কী অর্জন করতে যাচ্ছেন-এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তার স্ত্রীর ছবি তোলার জন্য বোরকা এবং হিজাব খুলতে বাধ্য করা হয়। এই হয়রানির ঘটনা তাদের হজ থেকে ফেরার আনন্দ মাটি করে দিয়েছে।
গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাস দমন আইনের ৭ ধারায় ২০১০ সাল থেকে মোট ৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৭২টি আটকের ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এক বছরে আটকের ঘটনা ১১ হাজার ১৫১টি। ২০১০ সালের মার্চ পর্যন্ত এক বছরে এ সংখ্যা ছিল ৮৫ হাজার ৫৫৭টি। কেইজ- এর প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রবিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘পুলিশের কাজ এবং সন্ত্রাস দমনের জন্য ৭ ধারার ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিবেদন প্রস্তুতকারীরা নিজেদের পরিকল্পিত উপসংহার টানার জন্য বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করছেন।’